BusinessLife StyleWorld

ব্যবসা যে কারণে শিক্ষা উচিৎ

ব্যবসা কেন শেখা উচিৎ

আমাদের দেশে চাকরির বাজার খুবই নাজুক, এটা জানেনা এমন তরুণ বা যুবক বাংলাদেশে নেই বললেই চলে । এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোট কর্মক্ষম মানুষের মাত্র ২৫% চাকরি আছে আমাদের দেশের বাজারে। তাহলে প্রশ্ন হলো বাকিরা এখন কি করে! বা ভবিষ্যতে নিজেদের স্বচ্ছলতার জন্য কি করবে? অবশিষ্ট এই ৭৫% এর অর্ধেক বেকার আর বাকি অর্ধেক বিভিন্ন দিনমজুরি কাজ বা সাধারন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তাহলে বুঝাই যায় যে আমাদের দেশের প্রাই ৩২% কর্মক্ষম মানুষই বেকার। আর বিশাল এই বেকার জনগষ্টির ইনকামের ব্যবস্থা না করলে এ দেশের কাঙ্খিত উন্নতি একবারেই সম্ভব না। কারণ ফাকা বুলিতে  পণ্য উৎপাদন হয়না এর জন্য প্রয়োজন মেহনত, ধৈর্য, ইনভেস্ট। আর এইসব সামগ্রিক দিক বিবেচনায় আপনার কেন ব্যবসা শেখা উচিত তাই আলোচনা করবো আজকের ভিডিওতে।

আমরা সবাই জানি যে মানুষ শুধুমাত্র টাকার জন্যই কাজ করে। আর চাকুরীর মধ্যে টাকার পরিমাণ সবসময় নির্দিষ্ট, যেখানে আপনার আমার জীবনের সব চাহিদা বা আকাঙ্খাই অনির্দিষ্ট । পরিশ্রমকে ঘন্টার মানদন্ডে বা দিনের মানদণ্ডে ফেলে মাস শেষে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে টাকা ইনকামের কিন্তু ধরাবাঁধা সীমা নেই।

তাই সাধারণ নিয়মে থেকে আপনি যদি চাকুরী করেন তাহলে মাস শেষে আপনাকে একটি নির্দেষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের দয়া হলে বা নিয়মে থাকলে  দুই বা এক বছর পর পর অযৌক্তিক পরিমাণে বৃদ্ধি করা হতে পারে আপনার বেতন।কিন্তু আপনি যদি নিজের একটি ব্যবসা শুরু করেন  তাহলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যত বেশি ইচ্ছা আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বেতনভুক্ত চাকুরীর চেয়ে ১০ গুণ বেশিও আয় করার সুযোগ রয়েছে।

ব্যবসার কথা সামনে এলেই আমাদের আশেপাশের বন্ধু-বান্ধব , আত্নীয়-স্বজনরা অনেকেই গৎবাঁধা নিয়মে বলে উঠে যে আমার তো টাকা নাই, আমি কি ঘোড়ার ডিমের ব্যবসা করবো? বা শূণ্য পকেটে আমি কি করে এন্টারপেউনিয়ার হবো?

মানছি ব্যবসা করতে টাকা লাগে কিন্তু ব্যবসার জন্য যেটা সব থেকে বেশি দরকার সেটা হলো স্কিল। আপনি কিছুদিন বা কয়েক বছর সময় দিয়ে ব্যাক্তিগত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করুন। তারপরে আপনি দেখবেন টাকা পয়সা হাতে আসছে এমনি এমনি, টাকা আস..লে তেমন কোনো সমস্যাই না।

ধরুন আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন , ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা অন্য যে কোন ফ্রীলান্স স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে তার পরে একটি ফেসবুক পেজ বা ওয়েব সাইট খুলে এই সেবা গুলো বিক্রি করেন তাতেও অনেক ভালো একটা ব্যবসা করা সম্ভব।অথবা কোনো কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিভিল,ইলেক্ট্রিক বা কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো একটা কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলুন। দেখবেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসা করার পুঁজি আপনি নিজেই তৈরি করে ফেলেছেন।

এখন কথা হলো কেন ব্যবসা শিখবেন?

ব্যবসা শিখে মূলত আপনার লাভ কোথায়! অনেকেরই তো ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন কারন থাকতে পারে! তবে আপনি ব্যবসা করবেন:

  • ১। বৈধ পথে কোটিপতি হওয়ার জন্যঃ

আপনি যদি বিলিয়ন ডলারের মালিক হতে চান তাহলে ব্যবসাই হতে পারে এক মাত্র বৈধ উপায়। হোক সেটা অনলাইন কিংবা অফলাইনে।ব্যবসা করার মানেই কিন্তু আপনার কর্মীদের ইনকামের টাকার ভাগ মাস শেষে আপনার পকেটেও আসা। আপনার কর্মী যত বেশী, টাকাও তত বেশী।

তাই চাকরী করে আপনি হয়তো ভালো ইনকাম করতে পারেন তবে সেটা দিয়ে বিলিয়ন ডলার এর মালিক হওয়া অসম্ভব যদিনা টেবিলের নিচ দিয়ে কিছু পাছার হয় আর কি।

  • ০২।।নিজে সাবলম্বী হয়ে প্রান্তিক সমাজের উন্নয়নের জন্য ব্যবসা করবেনঃ

আপনি চান নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করে নিজের খরচ নিজে বহন করা শেষে দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসতে, তাহলে দ্রুতই ব্যবসায় নেমে পড়ুন।  ভাবছেন চাকরী করে বা বিভিন্ন আন-এথিক্যাল কাজের মাধ্যমেও নিজের খরচ বহন করা সম্ভব এখানে পার্থক্য হচ্ছে ব্যবসায়  আপনার বস থাকছে না, আপনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছেন আর নিজের স্বপ্ন পুরনে কাজ করে যাচ্ছেন।

আপনি যেহেতু অনেক মানুষ কে সহায়তা করতে চান, তাহলে তাদের কর্মসংস্থান এর ব্যবসা করে দিতে পারেন আপনারই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে । একজনকে চাকরী দেয়ার মানে একজন বেকার কে বেকারত্বর অভিশাপ থেকে মুক্তি দিচ্ছেন, যা থেকে একটি পরিবার চিন্তা মুক্ত হচ্ছে আর এভাবেই পরোক্ষ ভাবে সমাজের উন্নতি করছেন আপনি নিজে। তাই কর্ম-সংস্থান তৈরিতে  ব্যবসার বিকল্প নেই।

  • ০৩। স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি সেল্ফ ব্রান্ডিংঃ

যদি নিজের কোন স্বপ্ন থাকে, হতে পারে কোন আইটি ফার্ম দেয়া অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সে জন্য আপনার দরকার প্রচুর দক্ষ জনবল আর লিংক-আপের পাশাপাশি ম্যানেজিং দক্ষতা। এই সব কিছুই পেতে পারেন শুধু মাত্র ব্যবসার মাধ্যমে।

এর বাইরেও ব্যবসার জন্য অনেক কারন থাকতে পারে ব্যাপারটা ব্যাক্তি বিশেষে ভ্যারি করে। যেমন কেউ হয়ত রিভেঞ্জ নিতে ব্যবসা করে আর কেউ হয়তো সমাজ ও ফ্যামিলির দায়িত্ব নিতে ব্যবসা করে।এখন আপনি যদি অনলাইন বা অফলাইনে ব্যবসা করতে আগ্রহী থাকেন তাহলে শুরু থেকেই আপনাকে প্ল্যান মাফিক আগাতে হবে।

আর প্লাণের প্রথম কাজ হবে লক্ষ্য নির্ধারণ করা।

সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পথে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপায় শিখে যাবেন অটোমেটিক্যালিঃ

*টাইম ম্যানেজম্যান্ট আপনাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে শেখাবে। অর্থাৎ, লাইফের প্রতিটি স্টেপে কোন কাজটি কখন করা প্রয়োজন তা বুঝতে শেখাবে।

*ব্যবসা আপনাকে সময় নির্ধারণ করে কাজ করতে শেখাবে।  যেমন: এই কাজটি আমি আজকের দিনের মধ্যে শেষ করে ফেলবো। তবে মাথায় রাখবেন একটা কাজ শেষে, অন্য কাজের শুরুর পূর্বে কিছুটা বিরতি অবশ্যই দিতে হবে।

সফল ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে:

*কেননা ধৈর্য আপনাকে সঠিক ডিসিশন নিতে সহায়তা করবে।

*অধৈর্য হলে বা তাড়াহুড়োতে যেকোন সময়ে ভুল ডিসিশন নিয়ে নিতে পারেন।

*বেশি বেশি কাজ ও পরিশ্রম করতে পারবেন যদি আপনি ধৈর্য্যশীল হতে পারেন।

* অপেক্ষা করলে এডভান্টেজ পাওয়ার সুবিধা থাকে সবসময়। ধৈর্য ধরে মার্কেটে টিকে থাকতে পারলেই, আপনার হাতের মুঠোয় মার্কেট দখলের যেকোন একটি সুযোগ হঠাৎ হয়তো সামনে চলে আসবে একদিন।

মোদ্দা কথা ব্যবসা আপনাকে আপনার জীবন বদলে  দেওয়ার পথে তিনটি বিষয় শেখাবেঃ

  • ১.সর্বদা নিজেকে গুছিয়ে রাখতে হবে।
  • ২.অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিতে হবে।
  • ৩.সবসময় পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে।

অনেক সময় আপনাকে ব্যবসায় একটু বেশি ইনভেস্টমেন্ট করতে হতে পারে যেন আপনি লাভ বেশি করতে পারেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভয় না পেয়ে আপনি যদি ঝুঁকি গ্রহণ করেন তাহলে আপনার অনেক লাভ হতে পারে। মাথায় রাখবেন আপনি ঝুঁকি নিবেন কিন্তু গ্রাহকদের খুশি করতে।

কেন গ্রাহকদের খুশি করতে হবে:

  • ১.গ্রাহক সন্তুষ্ট হলে সে তার নিজ মুখে মুখে আপনার পণ্যের প্রচার করবে।
  • ২. যেহেতু সে এখানে ভাল সেবা বা পণ্য পেয়েছে তাই সেই কাস্টমার বার বার ফিরে আসবে।
  • ৩. মার্কেটে নিজের প্রতিযোগীদের টেক্কা দিতে  সাহায্যে করবে।
  • ৪.অনলাইনে শেয়ার বা কমেন্টের মাধ্যমে আপনার ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।
  • ৫.ভবিষ্যেতের মাকের্টিং পরিকল্পনা বা সেলস ফানেল তৈরিতে সহয়তা হবে।

আপনাকে প্রত্যেক মাসের রেকর্ড কম্পিউটারে অথবা খাতায় লিখে রাখতে হবে তাহলেই সব যোগ-বিয়োগ করে দেখা যাবে কতটুকু লাভ করতে পারবেন আপনি। ব্যবসায় সবদিক দিয়ে  লাভ করার জন্য টাইম-লোকবল-টাকা এই তিনের  বিস্তারিত রেকর্ড রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তাই সবশেষে বলবো একজন উদ্যোক্তা রূপী ব্যবসায়ী হোন, নিজের চিন্তাশীল সৃষ্টিশীল মনন মেধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উৎপাদন করুন। যার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন আপনি নিজেই।ব্যবসা বা উদ্যোগতা হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার নতুন নতুন আইডিয়া গুলো পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button