BusinessLife StyleTechWorld

টাকা কিভাবে ম্যানেজ করা উচিৎ

মানি ম্যানেজমেন্ট

‘সেলফ-মেড’ কথাটা শুনতে ভালোই লাগে সবার তাইনা…! যদিও বেশিরভাগ সময়েই এই শব্দটি পুরুষদের জন্যই ব্যবহৃত হয়, কিন্তু ভাই এটা একবিংশ শতাব্দী। এই সময়েনারী-পুরুষের মধ্যে অর্থ-বিত্তের ঝনঝনানিতে কোনও তফাৎ নেই। এমনকি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে।

এই সফল ও সেলফ-মেড মানুষদের সাফল্যের রহস্যটা হলো তাঁরা জানেন কিভাবে টাকা-পয়সা সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে হয়। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে‘মানি ম্যানেজমেন্ট’।

আপনি টাকা-পয়সা কিভাবে রাখছেন, কোথায় খরচ করছেন বা কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করলে কী কী সুবিধে পেতে পারেন – এগুলোকেই বলা হয় মানি ম্যানেজমেন্ট। শুধু টাকা উপার্জন করলেই তো হয় না, তাকে কিভাবে দ্বিগুণ বা চতুর্গুণ করবেন, সে বিষয়েও সম্যক ধারণা থাকা উচিত।

আচ্ছা, টাকা মালটিপ্লাই করা ছেড়ে দিন, অন্তত কিভাবে আপনার কষ্টের উপার্জন সঠিক উপায়ে সামলে রাখবেন, সে বিষয়ে তো অবশ্যই ধারণা থাকা উচিত। আজ এমনই কিছু স্মার্ট টিপস আপনাদের দেব যার মাধ্যমে আপনি মানি ম্যানেজমেন্ট স্কিল একজন মানুষকে কি কি উপায়ে সাহায্য করতে পারে এবং একজন মানুষের কখন মানি ম্যানেজমেন্ট স্কিল অর্জন করা উচিৎ এসব বুঝতে পারবেন।

মানি ম্যানেজমেন্ট কেন করবেন? 

  • *অনেক কম সময়ে আপনি financially strong হয়ে দাঁড়াতে পারবেন মানি ম্যানেজমেন্টের জ্ঞান থাকলে।
  • *আর্থিক ভাবে কারো ওপরে নির্ভর থাকতে হবেনা, নিজের খরচ নিজে বহন করতে সমর্থ হবেন।
  • *বলা হয়ে থাকে বিপদের নাকি হাত-পা নেই, মানি ম্যানেজমেন্ট আয়ত্বে নিলে হঠাৎ এসে পড়া আর্থিক সংকট বা বিপদের জন্য তৈরি হয়ে থাকতে পারবেন।
  • *চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে সমস্যা হলেও, চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন।
  • *স্বপ্নের বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি সহ নিজের নির্দিষ্ট চাহিদা গুলোকে পূরণ করতে পারবেন। 
  • *সর্বোপরি আপনি মানসিক ভাবে অনেক হালকা এবং উৎসাহিত অনুভব করবেন।

কখন করবেন মানি ম্যানেজমেন্ট?

আপনি চাইলেও আপনার বয়সকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় বেধে রাখতে পারবেন না, সময়ের আবর্তনে ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব আপনার কাধে এসে পড়বে।

মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত হলে মানি ম্যানেজমেন্টের দীক্ষা প্রকৃতিই আপনাকে দিয়ে দিবে খুব অল্প বয়সে।

তারপরও বলছি, যখন থেকে বুঝতে শিখবেন ‘আপনার অনেক দায়িত্ব,জীবনে বহুদূর যেতে হবে’ সেদিন থেকেই শুরু করে দিন মানি ম্যানেজমেন্ট।

আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেআঠারো-উনিশ বছর বয়সই হতে পারে মানি ম্যানজমেন্ট বোঝার উপযুক্ত সময়। মনে রাখবেন সামনের দিনে যত টাকা ব্যয় হবে তারচেয়ে বেশি টাকা আগে থেকেই আপনাকে উপার্জন করে রাখতে হবে। 

ভেবে-চিন্তে খরচ করুন, ব্যয় বুঝে আয় করুন

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা যা ইচ্ছে যখন ইচ্ছে খরচ করেন। কিছু পছন্দ হলেই কিনে ফেলেন। যেন মাসের শুরুতে মাইনে ঢুকলেই খরচ না করা পর্যন্ত শান্তি নেই! কোনও ড্রেস হোক বা মেকআপ অথবা অন্য কিছু, যা এই মুহূর্তে না কিনলেও বিশেষ সমস্যা নেই, সেসব কেনা থেকে বিরত থাকুন ৭ দিন পর কিনবেন বলে ধরে নিন,তারপর দেখবেন সাতদিন হতে হতো আপনি ওটা কেনার কথা ভুলেই গেছেন। এতে দুটো সুবিধে – এক, আপনার আলমারিতে জায়গাতো বাঁচবেই সাথে সাথে আপনার টাকা-পয়সাও কিছুটা হলেও বাঁচবে। 

টাকা বাঁচানোর স্মার্ট একটি টেকনিক হতে পারে অল্প একটু গণিত কষে, না আপনাকে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হবেনা, আপনার বিকাশ বা নগদ ওয়ালেট ব্যবহার করেই কাজ হবে….

সবাই বন্ধুদের নিয়ে কম বেশি উঠা বসা করে থাকি, খাওয়া দাওয়া সেখানে একটি অংশ থাকে,সেখানে আপনি ৫ জন বন্ধুসহ কোনো খাবার খান তখন সাধারণত সবাই বিলটা শেয়ার করেই দেন। শেয়ারটা সাধারণত একহাজার টাকা বিলে সবাই দু’শ,তিনশ করে মিলিয়ে টাকা দিয়ে একজন বিলটা পেমেন্ট করে থাকি।

তো পেমেন্ট করার এ কাজটি আপনার বিকাশ বা নগদ ওয়ালেট থেকে পে করে বিভিন্ন হোটেল বা রেস্তোরাঁয় ২০% পর্যন্ত মে”বী ছাড় পেতে পারেন, ৫ জনের থেকে ২০% ছাড় মানে আপনি ৮০% টাকায় বিলটি পে করে নিজের টাকা বাঁচিয়ে নিতে পারলেন।

বলা চলে অনেকটা ফ্রীতেই বন্ধুদের মাঝে নিজের খাবারটা বাগিয়ে নিলেন…😁

আগে থেকেই একটা বাজেট তৈরি করুন

মাসের শুরুতেই আয় ব্যয়ের সমন্বয় করে একটা বাজেট তৈরি করে ফেলুন, একদিন সময় নিয়ে খাতা-কলম নিয়ে বসুন আর লিখে ফেলুন কোন কোন খাতে কী কী খরচ হতে পারে আপনার সারা মাসে। ধরুন, গ্যাসের জন্য আপনার মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা খরচ হয়, আবার মাস-কাবার দিতে একটা নির্দিষ্ট টাকা লাগে। এরকম প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় লিখে ফেলুন। চেষ্টা করুন যে খাতে যত খরচ লিখেছেন, তার মধ্যেই চলতে প্রয়োজন গুলো মেটাতে। এতে মাসের শেষে বেশ কিছু টাকা বাঁচবে যা আপনি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জমাতে পারেন।

টাকা জমান বুদ্ধির সাথে

আচ্ছা, টাকা জমানো ঠিক আপনার হাতে নেই? মানে যতই চেষ্টা করুন না কেন, মাসের শেষে সেই ফাকা পকেট শূন্য-মানিব্যাগ..! তাহলে আপনাকে আর একটু স্ট্রিক্ট হতে হবে। যখন নিজের বাজেট তৈরি করবেন, তখনই ঠিক করে ফেলুন যে এই মাসে আপনার কত টাকা জমাতে হতে পারে। আগেই সেই টাকাটা আলাদা করে সরিয়ে রাখুন। এভাবে কিছুটা হলেও আপনি মানি ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন। আপনি চাইলে কিছু ইনভেস্টমেন্টও করতে পারেন এবং তা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করে নিন যাতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রিমিয়াম লেভেলের টাকা জমা হয়ে যায়।

টাকা জমানোর ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্রুত টাকা জমানোর আরেকটি স্মার্ট আর্ট রয়েছে।

ধরুন, মাসে আট হাজার টাকা জমাতে গিয়ে আপনার নিজের উপর চাপ পড়ে যায় কিন্তু আপনি যদি সপ্তাহে দুহাজার টাকা করে জমান তাহলে কিন্তু বছর শেষে আপনার লাভ। এখন আবার বলবেন ৮ হাজার টাকা জমানোর সেটা জমালাম, লাভটা কোথায় হলো?

ঠিক এইখানেই ছোট্ট আরেকটি মজার অঙ্ক বুঝতে পারবেন এবং মানি ম্যানেজমেন্টের অন্য একটি ধাপে পৌঁছে যেতে পারবেন।

হিসাবটি হলো আপনি ৭ দিনে বা সপ্তাহে দুই হাজার টাকা করে জমাচ্ছেন, বায়ান্নো সপ্তাহে ৫২×২০০০= ১০৪০০০ টাকা

অন্য দিকে আপনি যদি ১২ মাসে সমান ৮ হাজার করেই জমাতেন তাহলে আপনার হতো ৮০০০×১২= ৯৬০০০ টাকা।

১০৪০০০-৯৬০০০= ৮ হাজার টাকা, অর্থাৎ এ পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি চাইলে ১ বছরে ১৩ মাসের টাকা জমাতে সক্ষম হবেন। 

Want এবং Need এর পার্থক্য বুঝুন

প্রয়োজন এবং চাওয়ার তফাৎ বুঝতে শিখুন। ধরুন হোটেল বা দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছেন রাস্তার অপর পাশে দেখলেন চোখে লাগার মতো শো-পিজ জ্বল জ্বল করছে। আপনার এই মূহুর্তে বাচ্চার বা পরিবারের জন্য খাবার কিনতে হবে অন্যদিকে পকেটে সংকট নিয়ে শোপিজের দিকেও তাকাচ্ছেন।

এখানে খাবার আপনার নীড, শোপিজ আপনার ওয়ান্ট, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এরকম নীড এবং ওয়ান্টের তফাত অনুযায়ী টাকা খরচ করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে সেই টাকা আপনার প্রয়োজন মেটানোয় ব্যবহার করতে শিখুন।

ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকারণে পড়া একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই,

“গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন। “

আপনার কাছে থাকা গ্রন্থের বিদ্যা অর্জিত না হলে এবং ধন-সম্পদ নিজের কাছে না থাকলে প্রয়ােজন অনুযায়ী কাজে লাগানাে যায় না। তাই এরূপ বিদ্যাকে বিদ্যা এবং ধনকে ধন বলে আখ্যায়িত করা অবান্তর নিতান্তই অবাস্তব বলা চলে।

তাই নিজের সবকিছু নিজ দায়িত্বে বুঝে নিতে শিখুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button