BusinessTechWorld

ইন্টারনেট যেভাবে তৈরী হয়

★ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে করেছে সহজ ও গতিশীল,ঠিক যেমনটা হয়েছিল আগুন আবিস্কারের পর। বর্তমান সময়ের আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থা ইন্টারনেট ছাড়া একদমই অচল। নাসার গবেষকেরা সবার আগে চাঁদে পা ফেলতে পারতোনা যদি তাদের হাতে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা না থাকতো।

★ইন্টারনেট শুধু একজন মানুষ নয়, পুরো একটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে। প্রতি ৮ টি ইন্টারনেট কানেকশনে একটি চাকরী, ৪৫০ কোটি ইউজার সমৃদ্ধ ইন্টারনেট তাহলে কত লোকের কর্মসংস্থান তৈরী করেছে তা আশা করি অনুমান করতে পারছেন।

★ইন্টারনেট শুধু উপকার করে এটা বললেও ডাহা মিথ্যা হবে। অর্থ লোপাট, হ্যাকিং, সাইবার বুলিং এর মতো নোংরা কাজও এখানে হচ্ছে। তারপরও সবদিক বিবেচনায় আপনি ইন্টারনেটকে পজিটিভ মার্কই দিতে পারেন।  

★সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট ব্যবস্থায় বিশ্বের ২২০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ১৯৫ তম, মোবাইলের ইন্টারনেট গতির কথা আর নাই বললাম। অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগতভাবে আমাদের থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা দেশগুলোও ইন্টারনেট ব্যবস্থায় আমাদের চাইতে বেশ এগিয়ে।

★ইন্টারনেটের বেহাল অবস্থা থেকে সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশের সিম কোম্পানি গুলো মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আমাদের বোকা বানাচ্ছে, তাহলে কিভাবে আমাদের অজান্তেই আমরা বোকা হয়ে যাই?

★বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের এরকমই যাবতীয় সমস্যা নিরসনে, ইলন মাস্ক তার স্টারলিঙ্ক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে অদূর ভবিষ্যতেই হাজির হচ্ছেন কি তবে?আপনি যদি  ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকেন তাহলে এসব প্রশ্নের উত্তর জানবেন আজকের ভিডিওতে।

★১৯০০ সালের গোড়ার দিকে নিকোলাস টেসলা প্রথম ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারনা দিতে গিয়ে বলেন,পুরো বিশ্বকে যদি তার ছাড়া সংযোগ দেওয়া যায় তবে কেমন হবে? এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ব্যাপক গবেষণা চলপ তবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে ১৯৬০ এ।

ষাটের দশকে কম্পিউটার যখন ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে থাকে তখন লিংকডার নামে MIT এর একজন প্রফেসর Intergalactic computer network নামে অবাক করা এক আইডিয়ার জন্ম দেন।

★আইডিয়াটা মূলত, আলাদা আলাদা কম্পিউটারকে বিশেষ কোনো কানেকশনের সাহায্য ছাড়া একটার সাথে আরেকটার সংযোগ ঘটানো। ঠিক এর পরপরই প্যাকেট সুইচ নামে ডেটা আদান প্রদানের একটি সিস্টেম তৈরি হয় যা পূর্বে ছিলনা।

★এই ষাটের দশকেই আমেরিকান আর্মির ডলার দিয়ে Advance Research Projects Agency সংক্ষেপে অর্পানেট নামের একটি এজেন্সি তৈরি হয়, এই অর্পানেটই প্রথম একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণ করে ইন্টারনেটের শুভ সূচনা করে।

★ডেটা পাঠানোর প্রথম কাজটি হয় ১৯৬৯ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখে। মেসেজ হিসেবে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ল্যাব থেকে ইউসিএল ল্যাবে প্রথম আনুষ্ঠানিক ডেটা পাঠানো হয়। কম্পিউটার দুটি ছিল একতলা বাড়ির সমান অবাক করা সাইজের।

তবে মজার বিষয় হলো, এই ডেটার শুধুমাত্র কিছু অংশ পর্যন্ত গিয়ে সিস্টেমটি ভেঙে পড়ে। তবে এ থেকেই প্রমানিত হয় এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডেটা পাঠানো সম্ভব।  

★আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত একটি জাল। যা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সবরকম ডেটা আদান-প্রদান করা হয়।

★ইন্টারনেটের আবিষ্কারক নির্দিষ্ট কোন একজন ব্যক্তি নয়। ইন্টারনেট এর আবিষ্কার এর পিছনে একাধিক ব্যক্তির কৃতিত্ব রয়েছে।

তবে,

Vint Cerf এবং Bob Kahn এই দুই ব্যক্তি ইন্টারনেটের সবথেকে প্রয়োজনীয় মূল বিষয়টি আবিষ্কার করেন। এইজন্য তাদেরকেই মূলত ইন্টারনেটের জনক বলা হয়।

এই দুই ব্যাক্তির ইন্টারনেট আবিষ্কারের মূল জিনিস দুটি হলাে Transmission Control Protocol (TCP) এবং Internet Protocol (IP)। প্রটোকল ছাড়া একাধিক কম্পিউটার এর যােগাযােগ সম্ভব নয়।

★মূলত এরপর থেকেই research এর মাধ্যমে নতুন নতুন জিনিস ইন্টারনেটে যুক্ত করা হয়। এবং ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। আগুনের পর মানুষের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার যদি হয় চাকা তাহলে ইন্টারনেটও এদের চাইতে কোনো অংশে কম নয়। কারণ সারা দুনিয়ায় ৮ বিলিয়ন মানুষকে তার দিয়ে কানেক্ট করা অসম্ভব। 

★ইন্টারনেট চালানাের জন্য বিশেষ ধরনের optical fibre ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি একধরনের Cable যুক্ত তার।এই ধরনের তার বা Optical Fibre Cable, সমুদ্রের নিচে দিয়ে ৮ লক্ষ কিলােমিটার এর বেশি জায়গা দিয়ে লম্বা ভাবে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে গােটা পৃথিবী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।

এমনকি এই cable এর ওপর দিয়ে যাতে কোন জাহাজ না আসে, এইজন্য ২৪ ঘন্টা পাহারা দেওয়া হয়। এবং যদি কোনাে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই জায়গায় গিয়ে, পুনরায় সমস্যার সমাধান করা হয়।

★ইন্টারনেট মূলত তিনটি জিনিসের ভিত্তিতে কাজ করে। ১. Server ২. Internet Service Provider ৩. Web Browser

Server মানে হলাে যেখানে ওয়েবসাইটের সমস্ত ডেটা গুলি জমা থাকে। সার্ভিস প্রােভাইডার টেলিকম সার্ভিস আমাদের মােবাইল বা কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে যােগাযােগ করার অনুমতি দেয়। এবং ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আমরা কোন রিকুয়েস্ট ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার কে পাঠাতে পারি।

★আমার যখন ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে কোন কিছু সার্চ করি, তখন সেই ওয়েব ব্রাউজার টি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার কে নির্দিষ্ট query টি খুঁজে বের করার রিকুয়েস্ট পাঠায়।

 তারপর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার, সার্ভারের সাথে যােগাযােগ করে। এবং সার্ভার নির্দিষ্ট জিনিসটি খুঁজে সার্ভিস প্রােভাইডার কে দিয়ে দেয়। এরপর সার্ভিস প্রােভাইডার, ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আমাদেরকে সেই জিনিসটি দেখায়।

মূলত এরকমভাবেই ইন্টারনেট কাজ করে। আর এই সমস্ত কিছু খুবই অল্প সময়ের মধ্যে হওয়ার কারণে আমরা এই সম্পর্কে বুঝতে পারিনা।

ইন্টারনেটের কেন এতো দাম বাংলাদেশে?

আমাদের দেশের সীম কোম্পানিগুলো চোখের আড়ালে ঘটা ইন্টারনেটের ঘটনা গুলো চেপে ধরে আমাদের রীতিমতো গলা কাটছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবস্থা যেখানে ফ্রী আমাদের দেশে পকেট ফাকা হয়ে যায় ২-৩ জিবি ডাটা কিনতেই। 

★সমুদ্র বিছানো অপটিক্যাল ফাইবারের ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে আমাদের দেশে ইন্টারনেট মূলত টায়ার 1, টায়ার 2 এবং টায়ার 3 অনুযায়ী বিক্রি হয়। যেখানে প্রোভাইডার হিসেবে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি টায়ার 1, টায়ার 1 থেকে নেট কিনে বিক্রি করায় সিম কোম্পানি গুলো টায়ার 2 ডিস্ট্রিভিউটর এবং বাসা- বাড়ীতে তারের মাধ্যমে যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয় তারা হলেন টায়ার 3 ডিস্ট্রিভিউটর।

সিম কোম্পানি গুলো টায়ার 1 থেকে ১জিবি ইন্টারনেট মাত্র কয়েক পয়সা খরছে কিনলেও বিক্রি করছে ৪০-৫০ টাকা। মূলত নেটওয়ার্ক টাওয়ারের পিছনেই তাদের ৮০% টাকা খরছ হয়ে যায়। তাই এইরকম চড়া মূল্য আমাদের নেট কিনতে হয়। টাওয়ার থেকে ইলেক্ট্রো ম্যাগনিফাইন ওয়েব দ্বারা আমাদের ফোন পর্যন্ত ডাটা আসে। এই ওয়েব মূলত প্রাকৃতিক তরঙ্গ যা মূলত ফ্রী তবে ফ্রীকোয়ন্সী গুলো টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। 

★তবে ডাটাপ্যাক নিয়ে অভিযোগের মূল বিষয় হলো ধরুন আপনি পাঁচ জিবি ডাটা কিনলেন দশদিন মেয়াদের, দশদিন পর দেখা গেল আরো দুই জিবি ডাটা অব্যবহৃত রয়ে গেল। এই ডাটা তাহলে যাচ্ছে কোথায়! সিম কোম্পানি গুলো এই ডাটা অন্য ইউজারের কাছে বিভিন্ন স্বল্পমূল্যর প্যাকেজ আকারে বিক্রি করে। দিস ইজ বিজনেস 😉

আসলে সিম কোম্পানি গুলোর অধিক মুনাফা করার লোভের বলি আমরা যারা সাধারণ জনগণ আছি। ট্রাস্ট মি ১ জিবি নেট ১০ টাকার কমে দিলেও সিম কোম্পানির তেমন একটা ক্ষতি নেই। ব্যবসায়ীক ফায়দা লোটার মোক্ষম প্লাটফর্ম রবি,এয়ারটেল,বাংলালিঙ্ক বা জিপির  বিদেশী সিম কোম্পানি গুলো। কেননা বিভিন্ন অযুহাতে এই খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সিস্টেম নাই বললেই চলে। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে কম মূল্য ইন্টারনেট দিচ্ছে সেখানে আমাদের অবস্থান ১৩ তম। 

Starlink কি?

বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন, ইলন মাস্ক। ইলন মাস্ক এর কথা উঠলে তার ইলেক্ট্রিক কার কোম্পানি টেসলা ও তার স্পেস এক্সপ্লোরেশন ভেনচার, স্পেসএক্স এর কথা আসে। তবে তিনি যে স্টারলিংক (Starlink) নামে একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন, সেটি অনেকেই জানেন না। আবার স্টারলিঙ্ক এর নাম শুনলেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না অনেকে।

প্রাইভেট স্যাটেলাইট এর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ পৃথিবীতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে স্টারলিংক। 

স্টারলিংক হলাে স্পেসএক্স এর একটি শাখা, অরবিটাল স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করে। একটি বৃহৎ স্যাটেলাইট ব্যবস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ভিত্তিকদ্রুত গতির  ইন্টারনেট সেবা প্রদানে এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে।

★ইলন মাস্কের চাওয়া অনুযায়ী ২০১৫ সালে এই স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এর কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে এসে প্রথম প্রােটোটাইপ স্যাটেলাইট অরবিটে লঞ্চ করা হয়। পরের বছরগুলােতে স্পেসএক্স সফলভাবে প্রায় ২,০০০ স্টারলিংক স্যাটেলাইট অরবিটে লঞ্চ করে।

২০১৫ সালে প্রথমবার স্টারলিঙ্ক এর কথা জানান ইলন মাস্ক। তিনি জানান, “স্টারলিংক এর ফোকাস হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটি গ্লোবাল কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরী করা, যা অনেকটা স্পেসে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানাের মত হতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হলাে যতদূর সম্ভব ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া।”

২০১৯ সালের জুন মাসে ইলন মাক জানান যে দূরবর্তী ও কম ঘনত্বের এলাকাগুলােতে লাে-লেটেন্সি, হাই-ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট অ্যাকসেস সেবা প্রদান করবে স্টারলিঙ্ক। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথেষ্ট স্পিভযুক্ত ব্যবস্থা নেই, তারাই হতে যাচ্ছেন স্টারলিংক এর গ্রাহক। ইতিমধ্যে স্পেসএক্স ১১,৯৪৩টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে লঞ্চ করেছে ও ৩০,০০০ এর বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চের প্ল্যান করছে।

স্টারলিঙ্ক এর উদ্দেশ্য

স্টারলিংক এর উদ্দেশ্যে গ্রাহকের ঘরে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। হিউগসনেট বা ভিয়াস্যাট এর মত প্রতিষ্ঠানগুলাের মত স্টারলিঙ্ক ও স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট বিক্রি করতে চায়। স্টারলিঙ্ক এর মূল উদ্দেশ্য হলাে গ্রাম অঞ্চলে। ও হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নেই, এমন স্থানসমূহে ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটানাে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button