BusinessLife Style

ধনী হওয়ার উপায়

‘গরীব ঘরে জন্ম নেয়াটা দোষের না কিন্তু গরীব হয়ে মৃত্যুবরন করাটা দোষের’ বিলগেটস এর উক্তিটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত ।  সততা যদি সঠিক নীতি হয়, তাহলে নীতিবানরা সব ধনী না হয়ে গরীব বা মধ্যবিত্ত থাকছে কেন!

 আসলে ধনী হওয়ার জন্য কিছু বড় মানসিকতার প্রয়োজন হয় আর এর জন্য আমাদের কিছু শুদ্ধ চিন্তার দরকার । ধনী-গরীবের বৈষম্য মধ্যবিত্তরা কাল্পনিক যোদ্ধা, যারা অস্তিত্ব রক্ষায় কিছু বলতেও পারেনা আবার করতেও পারেনা।

তাই আজকের আলোচনায় থাকছে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেন গরীবরাই গরীব, মধ্যবিত্তরা মধ্যবিত্ত এবং ধনীরা আরো ধনী হয়? এছাড়াও কি কি গুণ থাকলে আপনি গরীব থেকে ধনী হতে পারবেন এসবই আমরা জানতে চেষ্টা করবো এই ভিডিওতে।

আচ্ছা, অধিকাংশ গরীব মানুষ কেন গরীব থেকে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে যদি আমি আপনাদের প্রতি প্রশ্ন রাখি, কেন সমাজের কিছু মানুষ গরীব হলো? 

বন্ধুরা রাফলি একটা ইতিহাসটা বলছি,

কৃষিভিত্তিক সমাজ ডেভলাপের পর কিছু মানুষের উপর দায়িত্ব ছিল শস্যশালা গুলি দেখভাল করার। এরা একসময় পাওয়ারফুল হয়ে ওঠে কারণ তাদের হাতে ছিল শস্য বণ্টনের ক্ষমতা।

এরপর শস্য বন্টনের ক্ষমতা মন্দির বা উপাসনালয়ে পরিবর্তিত হয়, আর এগুলি দেখভালের দায়িত্বে থাকে পুরোহিতরা।

এভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজ যত এগিয়ে যেতে থাকে ততোই সমাজে শ্রমের বিভাগ হয়, সামাজিক শ্রেণী বিভাজন হয় এবং নানা ধরণের সামাজিক সম্পর্কের সূচনা হয়। যেটি আগের হান্টার গেদারার সোসাইটিতে ছিল না।

এই পুরোহিত টাইপের লোকেরাই আইন তৈরি করে আর তাদের ক্ষমতা রক্ষা করতে তৈরি করে সৈন্যবাহিনী। এইভাবে আমরা বর্তমান শাসক শ্রেণীদের আদিরূপ পাই। যখন সম্পদ সমাজের ক্ষমতাশালী এক শ্রেণীর হাতে চলে যেতে থাকবে তখন সমাজে গরীব মানুষ তৈরি হবে কিংবা নিম্ন শ্রেণীর সৃষ্টি হবে।

সেটাই  হয়েছে এবং আমাদের সমাজেও একই রকম ধারার মধ্যে দিয়ে আসায় আমরা বর্তমান সমাজ পেয়েছি।

আমি যদি বলি এই সমাজে গরীব কেন গরীব থাকে, এর উত্তরে আপনি গরীব লোকদের কেবল দোষ দিলে তা ক্ষেত্রবিশেষ ভুল বিচার হবে। কারণ সম্প্রতী আপনারা দেখেছেন চা বাগানের শ্রমিকদের পরিস্থিতি কিংবা একজন লোকাল বাসের স্টাফ, এরা কীভাবে ধনী হবে? তাদের ধনী বা স্বচ্ছল হবার কতোটা সুযোগ আমাদের গুণে ধরা সামাজিক সিস্টেমে রাখা হয়েছে?

এই ভিউ পলিটিক্যাল মনে হতে পারে। কিন্তু এর ভেতরে সত্যতা রয়েছে। উপসংহারে, গরীবের গরীব থাকাটা মূলত সিস্টেমের কারণ। ব্যক্তির নিজের সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলির পেছনে কারণ খুঁজতে গেলে বিগ পিকচারে সিস্টেমের ব্যর্থতাই পাওয়া যাবে।

তবে দর্শক অর্থনৈতিক দিক থেকে অভারঅল পিকচারে দেখলে বলা যায়,

★গরীবরা বড় পদক্ষেপ নিবেন তো দূরের কথা ভাবতেও ভয় পান।

★তারা সেভিংস করেন না।

★দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান করেন না, এটি তাদের গরীব থাকার পেছনে অবদান রাখে।

★প্রকৃতপক্ষে গরীব মানুষ চায় না নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে।অভাব-দুর্দশা-গ্লানি এগুলো থেকে মুক্তির পথ না সন্ধান করে মানুষ সেগুলোকে আকড়ে ধরে হা-হুতাশ করেই জীবন পার করে দেয়।

তাহলে মধ্যবিত্তরা কেন মধ্যবিত্ত থাকে?

  • শুধু টাকা ইনকাম করলাম আর সেটা দিয়ে ভালো করে জীবন চালীয়ে গেলাম এটাই হলো মিডিল ক্লাসদের ভাবনার লেভেল।
  • সবাই একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরোপুরি ফোকাস থাকে বেশি টাকা বাচানো ;বেশি আয় করা নয় ।
  • মধ্যবিত্তরা যেকোনো সম্পদ আকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, রিস্ক নিয়ে সম্পদের পরিধি বাড়াতে বড্ড অনীহা তাদের।
  • তারা কখনো স্মার্টলী কোন কিছু করার কথা ভাবে না আর সে জন্যই তারা এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করতে পারে না ।

মধ্যবিত্ত আপনি যদি ভেবে থাকেন কঠোর পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি তাহলে আপনি ভুল করছেন। কঠোর পরিশ্রম করলেই যদি ধনী হওয়া যেত তাহলে হয়ত কারখানার শ্রমিকরা বা রিক্সা ওয়ালারাই সবথেকে ধনী থাকত।

জীবনে সব ক্ষেত্রেই এক্সট্রিম লেভেলের কিছু অ্যাড করতে গেলে হার্ড ওয়ার্ক-ই যথেষ্ট নয়। এখানে চলে আসে স্মার্ট ওয়ার্কের গল্প। বন্ধুরা আপনারা অনেকেই জানেন বিলগেটস তার কোম্পানি মাইক্রোসফটে অলস মানুষদের অগ্রাধীকার দেন । তার বক্তব্য হল অলস মানুষরা কখোনই কঠোর পরিশ্রম পছন্দ করেন না তাই কঠিন কাজ করার জন্য সংক্ষেপ কোন স্মার্ট পদ্ধতি বের করে ফেলেন; যেটা কোম্পানির খরচ কমিয়ে লাভ বারিয়ে দেয় ।

কখনো কখনো আমরা এমাজন, ফ্লিপকার্ড, দারাজ তোলপার করে ফেলি কিভাবে ৭০০ টাকার পন্য ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। আচ্ছা বন্ধুরা আমরা কি একবারও দেখিছি বা শুনেছি যে কেউ টাকা বাচিয়ে অনেক ধনী হয়েছেন । বর্তমান সময়ে টাকা ব্যাংকে রাখলেতো প্রতিবছর ৪% ভেলিওশন হারে আপনার টাকা কাটা হয় তার মানে উল্টো আপনি প্রতি বছর আরও গরিব হতে চলেছেন ।

★ মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে সঠিক বুদ্ধি হলো টাকা জমিয়ে না রেখে তা দিয়ে কোথাও ইনভেষ্ট করা বা ব্যবসা করা তাহলে ঐ টাকা গুলোই আপনাকে আরও টাকা এনে দেবে । জীবনে রিস্ক না নিল সফলতা অসম্ভব। 

সবই বুঝলাম ভাই তবে কি এমন গুণ থাকায় ধনীরা আরো ধনী হয়?

  •  তারা সব অবস্থায় নিজের মনোভাব গোপন রাখতে পারে, আবেগেকে কখনোই প্রাধান্য দেয়না তারা।
  •  যে কোন পরিস্থিতি সাহসের সাথে মেনে নিয়ে মোকাবিলা করে।
  •  নীতি এবং আদর্শকে কঠোর ভাবে জীবনে গ্রহন না করা, কারন জীবনের বাঁকে বাঁকে এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন রূপে সামনে আসবে।
  •  ভালো পর্যায়ে যাব এই উচ্চ আকাংখা মনে প্রানে লালন করা।
  • ধনী হওয়ার লক্ষ্যেই নিজের কাজ করা এবং এ লক্ষ্যে অটল থাকা সারাজীবন। 
  • সকল ধরনের সম্পর্কের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখা, ক্লাস বিভাজন মাথায় রেখে।
  •  না কে জোর গলায় ‘না’ বলার ক্ষমতা রাখা।
  • যেভাবে ধনী হতে চাইছেন সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখা, নিজের কাজে নিজের কাছে সৎ থাকা।
  • ধন্যবাদ দিতে পারা এবং মুখে হাসি রাখা।

তো বন্ধুরা ফাইনাল কথা হল, কি কি গুণ থাকলে আপনি গরীব থেকে ধনী হতে পারবেন?

★মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমস্যা কে সমাধানে রূপান্তর করার মানুষ হাতেগুনা কয়েকজন ই দেখা যায় বর্তমান সমাজে। প্রকৃতপক্ষে তারাই তাদের নিকষ কালো বর্তমান কে পরিবর্তন করে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল আলোর অদূর সম্ভাবনায় নিয়ে দাড় করাতে পারে যারা বুকে সাহস রেখে লড়তে জানে।

★ বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে মানি ম্যানেজমেন্ট কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করে নিজের কাছে থাকা অল্প সম্পদ বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ নেয় বহুগুণে।

★ মানুষের মধ্যে আছে অসীম সম্ভাবনা, যে চেতনা সে ভিতরে লালন করে সে চেতনাকে জাগ্রত করতে পারলেই মহাচেতনার সাথে সংযোগায়ন-ই তাকে নিয়ে যাবে সমস্ত অসম্ভবের উর্ধ্বে।যা সে চাইবে সে তাই পাবে তবে চাওয়াটা হতে হবে চাওয়ার মতো।নিজের অন্তর যেনো সেই চাওয়াকে শুনতে পায়।

সুতরাং, এই কথা অবলীলায় বলা যায় যে,মানুষের দুর্দশার জন্য, গরিব হয়ে মারা যাওয়ার জন্য সে নিজে,একান্ত-ই সে নিজে দায়ী আর কেউ নয়।নিজের মধ্যের অসীম শক্তিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কেউ কখনোই ভাগ্য কে দায়ী করতে পারে না। ধনী না হওয়ার জন্য তাই মোটাদাগে ব্যক্তি নিজেই দায়ী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button